এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে আলোচিত গরু চুরির অপবাদে মা-মেয়েসহ পাঁচজনকে স্থানীয় লোকজন কর্তৃক প্রথমে ও দ্বিতীয় দফায় ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান পরিষদে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন ও মারধরের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়লে টনক নড়ে প্রশাসনের।
এরপর রবিবার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেনের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখার পরিচালক (উপ-সচিব) শ্রাবন্তী রায়কে প্রধান করা হয়। অন্য দুই সদস্য হলেন চকরিয়া উপজলা সহকারি কমিশনার ভুমি তানভীর হোসেন ও উপজেলা বিআরডিবির প্রকল্প কর্মকর্তা (হারবাং ইউনিয়নের দায়িতপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ) সঞ্জয় চক্রবর্তী।
গতকাল সোমবার দুপুর একটার কিছু আগে পৌঁছে বিকেল চারটা পর্যন্ত তদন্ত টিমের প্রধান স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) শ্রাবস্তী রায়ের নেতৃত্ব তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম হারবাং ইউনিয়নের ঘটনাস্থল সুমুহ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকার অনেকের কাছ থেকে নিয়েছেন সেইদিনের জবানবন্দি। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য চকরিয়া সহকারি কমিশনার (ভুমি) তানভীর হোসেন বলেন, ঘটনার সময় উপস্থিত মেম্বার-চৌকিদারদের জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজনের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলা যাচ্ছেনা। শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে প্রেরণ করা হবে।
অন্যদিকে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজের নেতৃত্বে আরেকটি তদন্ত কমিটি মাঠে কাজ করছে। রবিবার বিকেলে ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেছেন।
এদিকে বিষয়টি প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, গরু চুরি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহিলাদের কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। গরু চোর যেই হোক এ ঘটনায় আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের ডিডিএলজি (উপসচিব) শ্রাবস্তি রায়’কে আহবায়ক করে গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে দ্রুতসময়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য তদন্ত কমিটিকে পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: ২১ আগস্ট শুক্রবার চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে গরু চুরির অপবাদে মা-মেয়েসহ পাঁচজনকে রশি দিয়ে বেঁেধ নির্যাতন করে স্থানীয় লোকজন। পরে তাদের রশি দিয়ে বেঁধে প্রকাশ্যে সড়কে ঘুরিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরান পরিষদে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় দফায় মারধর করেন।
পরে গরু চুরির অভিযোগে হারবাং ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহমুদুল হক শুক্রবার রাতে বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরের দিন শনিবার সকালে আসামীদের আদালতে উপস্থিত করা হলে মামলার প্রেক্ষিতে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে সোমবার সকালে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজিব কুমার দেব’র কাছে আসামীদের পক্ষে জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ আরিফের নেতৃত্বে একদল আইনজীবি। এসময় আদালত পাঁচ আসামীর মধ্যে মা ও দুই মেয়ের জামিন আবেদর মঞ্জুর করেন।
পাঠকের মতামত: